এই ব্লগটি সন্ধান করুন

রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১২

কুমিল্লার ইতিহাস,ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ


কুমিল্লার ইতিহাস

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে
 এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা 
হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি 
দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের 
শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
 অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
 ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা 
জেলার 

ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ

১৭৬৪ সালে ত্রিপুরার রাজার বিরুদ্ধে শমশের গাজীর নেতৃত্বে পরিচালিত 
কৃষক আন্দোলন এ অঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সাধারণ কৃষক
 পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও শমশের গাজী সম্পূর্ণ চাকলা রওশানাবাদ অঞ্চলের 
শাসক হয়েছিলেন, যা পরবর্তীকালে দক্ষিণ কুমিল্লা থেকে উত্তর নোয়াখালী
 পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এক সময় তিনি সমগ্র কুমিল্লাকে তার শাসনাধীনে নিয়ে 
আসেন। পরবর্তীকালে তিনি নিজামপুর পরগনা জয় করেন। এভাবে, তিনি 
মেঘনা, মুহুরি ও মনুগঙ্গা নদীসমূহের মধ্যবর্তী বিশাল জনপদের মুকুটবিহীন 
রাজায় পরিণত হন।[১]
শমশের গাজী ১৭১২ সালে উত্তর চট্টগ্রামের দক্ষিণ শিক পরগনার কুঙ্গুরা গ্রামে 
জন্মগ্রহণ করেন, যা পরবর্তীকালে ত্রিপুরার মানিক্য রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
 স্থানীয় জমিদার নাসির মোহাম্মদের অফিসে তেহশিলদার হিসেবে কাজ করার 
সময় তিনি একজন স্বর্গীয় পীরের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি 
রয়েছে।[২]

শিশুকাল থেকেই শমশের গাজী ছিলেন সাহসী এবং বুদ্ধিমান। তৎকালীন 
সময়ে চাকলা রওশানাবাদ ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনে ছিল। এর জমিদার ছিলেন 
নাসির মাহমুদ। নাসির মাহমুদ শমশেরকে অত্যন্ত যত্নের সাথে বড় করে
 তোলেন। কিন্তু তরুণ বয়সে শমশের অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ছিলেন। তিনি
 জমিদারের কন্যাকে বিবাহ করতে চাইলে, তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়
 এবং তাকে বন্দী করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে শমশের গাজী একটি সশস্ত্র 
বাহিনী গঠন করেন। এর মাধ্যমে ১৭৪৫ সালে তিনি নাসির মাহমুদের রাজ্য 
দখল করেন।

ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে, জমিদারী প্রথা কৃষকদের জীবনকে দুর্বিষহ 
করে তুলেছিল। শমশের গাজী ছিলেন বিজ্ঞ, যোগ্য, দয়ালু এবং উদার 
শাসক'। তিনি দরিদ্র কৃষকদের কষ্ট লাঘবের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন এবং 
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হন। ফলে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের 
দাম কমতে থাকে। তিনি হিন্দু মুসলমান কৃষকদের জন্য নিষ্কর ভূমির ব্যবস্থা 
করেন। তিনি রাজধানী জগন্নাথ সোনাপুরের ভিতরে ও বাইরে বহু সংখ্যক 
দীঘি খনন করেন এবং বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি যেসব দীঘি স্থাপন 
করেছিলেন, তার মধ্যে 'কাইয়ার সাগর' ছিল সবচেয়ে বড়।[৩]

দক্ষিণ শিক এবং মেহেরকুল পরগনার শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে,
 শমশের ত্রিপুরার দিকে মনোনিবেশ করেন এবং ১৭৪৮ সালে রাজা কৃষ্ণ 
মানিক্যকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করে তাকে রাজ্য থেকে 
বিতাড়িত করে ত্রিপুরা দখল করেন। তবে রাজ্যের পাহাড়ী উপজাতিরা কৃষ্ণ 
মানিক্যের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং শমশেরের প্রবল বিরোধিতা করে।[৪]
কৃষ্ণ মানিক্য শমশের গাজীকে মোকাবেলা করার জন্য কুকি সৈন্যদের দুইটি শক্তিশালী অভিযান দল পাঠান। কিন্তু শমশেরের অসাধারণ রণকৌশল ও 
বীরত্বের কাছে দুইটি অভিযানই ব্যর্থ হয়। শমশের গাজী ত্রিপুরার রাজধানী 
উদয়পুর দখল করেন। এরপর তিনি আগরতলা যান এবং নবাব মীর
 কাসিমের প্রতিরক্ষা বুহ্য ভেদ করার প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু মীর কাসিম 
শমশেরকে আলোচনার জন্য মিথ্যা আমন্ত্রণ জানান এবং তার আহবানে সাড়া 
দিতে গিয়ে ১৭৬০ সালে শমশের গাজী নিহত হন। এভাবে কৃষ্ণ মানিক্য তার 
হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময় কুমিল্লা শহরে গুলিবর্ষণে একজন মুসলমান 
নিহত হলে, পুরো কুমিল্লা জুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বিস্তৃত হয়। ১৯২১ 
সালের ২১ নভেম্বর দেশব্যাপী হরতাল পালনের প্রস্তুতিগ্রহণের সময়, এখানে 
কাজী নজরুল ইসলাম দেশাত্মবোধক গান রচনা করেন এবং প্রিন্স অফ 
ওয়েলসের ভারত সফরের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। এই সময়ে, অভয় 
আশ্রম একটি বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান রূপে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধী এই সময়েই কুমিল্লা সফর করেন। ১৯৩১ 
সালে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মোহিনি গ্রামে চার হাজারেরও বেশি কৃষক একটি 
ভূমি রাজস্ব করের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ব্রিটিশ গুর্খা সৈন্যরা সমবেত কৃষক 
জনতার উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করলে চারজন নিহত হয়। ১৯৩২ সালে 
লাকসাম উপজেলার হাসনাবাদে আরেকটি কৃষক সমাবেশে পুলিশ গুলি চালালে 
দুইজন নিহত হয় এবং বহুসংখ্যক আহত হয়।

১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী সুনীতি 
চৌধুরী ও শান্তি ঘোষ গুলি করে ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার স্টিভেন্সকে হত্যা করে
 স্বাধীনতা আন্দোলনে কোন নারীর অংশগ্রহণ সেবারই প্রথম ঘটে।

কুমিল্লার যেসব স্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের গণহত্যার চিহ্ন 
বহন করে চলেছে সেগুলো হলঃ লাকসাম, কুমিল্লা ক্যান্টনম্যান্ট, হোমনা, 
বেলতলী ও রসুলপুর। এছাড়াও বেতিয়ারা, মোজাফফরগঞ্জ, নাগারিপাড়া,
 ক্যান্টনমেন্ট, কৃষ্ণপুর, ধনাঞ্জয়, দিলাবাদ ও লাকসাম বিডি ফ্যাক্টরি এলাকায় 
গণকবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, বেতিয়ারা, পুলিশ লাইন
 ক্যান্টনমেন্ট, লাকসাম, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশন এবং হারাতলীতে 
শহীদদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিসৌধ রয়েছে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন